সর্বশেষ

চাকরির আবেদন না করেই ওয়াসার ডিএমডি

প্রকাশ :


২৪খবর বিডি : সাড়ে তিন মাস আগে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। ওই পদের বিপরীতে জমা পড়ে ৪৩ ব্যক্তির আবেদন। মজার ব্যাপার হলো, আবেদনকারীদের কেউই ডিএমডি হতে পারেননি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে যিনি ডিএমডির (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন, তার আবেদন করার প্রয়োজনই হয়নি। তিনি 'ভাগ্যবান' সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানী। * কে এই ইয়াজদানী? সেই খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়নি বিস্তারিত কিছু। ঢাকা ওয়াসার শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও ইয়াজদানীর ফোন নম্বর বের করা যায়নি। কীভাবে ঘটল এই ঘটনা? এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার এক বোর্ড সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এক দিন বোর্ডসভায় ডিএমডি নিয়োগ-সংক্রান্ত আলোচনা ওঠে। তখন ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আবেদনকারীদের তালিকায় সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানীর নাম অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেন। তখন কয়েকজন বোর্ড সদস্য আপত্তি জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি কেউ আবেদন না করেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে কারও নাম এভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা। তখন বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ও ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান যুক্তি দেন, আবেদনকারীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা মানেই তাকে চাকরি দেওয়া নয়। শুধু তাকে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া। বোর্ড সদস্যরা মত দিলে সেই সুযোগ তাকে দিতে পারেন। আর ইয়াজদানী অনেক দক্ষ ও যোগ্য লোক। তার মতো যোগ্য ব্যক্তি ওয়াসায় ডিএমডির দায়িত্ব পালন করবেন কিনা, সেটাও প্রশ্ন আছে। কাজেই তাকে তালিকায় রাখা যেতে পারে। এভাবেই ইয়াজদানীর নাম আবেদনকারীদের তালিকায় ঢোকানো হয়। কাকতালীয়ভাবে সেই ইয়াজদানীই মাসিক পাঁচ লাখ টাকার সুবিধাসহ ডিএমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি লুফে নেন। এ ব্যাপারে ওয়াসার আরেক বোর্ড সদস্য সমকালকে বলেন, "মৌখিক পরীক্ষার সময় তার কাছে শুধু জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার মতো দক্ষ লোক ওয়াসার ডিএমডির দায়িত্ব পালনে আগ্রহী কিনা। তখন ইয়াজদানী 'হ্যাঁ'সূচক মন্তব্য করেন। এ ছাড়া আর কোনো প্রশ্ন তাকে করা হয়নি। কীভাবে যে কি ঘটল, তা বুঝতে পারছি না।" * জানা যায়, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড গত ৯ জানুয়ারি উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে গত ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অনলাইনে নির্ধারিত লিঙ্কে আবেদন করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে ৪৩ ব্যক্তি আবেদন করেন। সমকালের হাতে আসা ওই তালিকার কোথাও সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানীর নাম নেই। ওয়াসার নির্ধারিত ওই লিঙ্কের তালিকায়ও ইয়াজদানীর নাম নেই। অথচ গত বোর্ডের সুপারিশের কথা উল্লেখ করে গত রোববার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ইয়াজদানীর নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ' এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে মন্ত্রণালয়ের কোনো কিছুই নেই। ওয়াসা বোর্ডের পাঠানো তালিকা অনুযায়ীই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ' তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ইয়াজদানীর বড় ভাই এক সময় ঢাকা ওয়াসার ডিএমডি ছিলেন। সেই ব্যক্তিকে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান খুব পছন্দ করতেন। এ জন্য অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে এমডি এ কাজ করেছেন। কর্তৃপক্ষ যদি বিশেষ কাউকে আবেদনের সুযোগ দিতে চাইতেন, তাহলে ফের আবেদনপত্র আহ্বান করতে পারতেন। এটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হতো। সেটা না করে খেয়াল-খুশিমতো লোক ডেকে নিয়োগ দেওয়ায় ওয়াসার প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না। ঢাকা ওয়াসার মর্যাদার স্বার্থেই এ নিয়োগ বাতিল করা উচিত। ' এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কানাডায় অবস্থানরত ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফ বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ওয়াসায় ঘটেনি। ' পরে হোয়াটসঅ্যাপে ইয়াজদানীর নিয়োগ আদেশ পাঠানোর পর তিনি বলেন, এখনও তো যোগদান করেননি তিনি। আগে যোগদান করুক। তারপর কথা বলব। Attachments area

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত